#কলকাতা: বর্তমান সময়ে বার্তালাপ করার অন্যতম একটি মাধ্যম WhatsApp। অতীতে যা ছিল SMS বর্তমানে তার জায়গায় এসেছে জনপ্রিয় এই অ্যাপ। তবে SMS-এর ক্ষেত্রে অনেক কিছু জিনিস পাঠানো বা গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। যেমন ছবি বা ভিডিও বা ফাইল সেভাবে পাঠানো সম্ভব হত না। কিন্তু WhatsApp আসার পর এই সমস্যাগুলির সমাধান হয়েছে।
অন্য দিকে, এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশনের (End-To-End Encryption) ফলে কথাবার্তা হয়েছে আরও সুরক্ষিত। কিন্তু এসবের মাঝেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে WhatsApp চ্যাট লিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী ভাবে? বর্তমানে v-এর প্রায় ২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। তাদের সমস্ত চ্যাট অত্যন্ত নিরাপদে এবং সুরক্ষিতভাবে রাখা থাকে। এত নিরাপত্তা থাকলেও চ্যাট কেন হ্যাক হয়ে থাকে? এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল এই প্রতিবেদনে। জেনে নিন বিস্তারিত…
WhatsApp এনক্রিপশন বিষয়টি কী?
WhatsApp-এর তরফে জানানো হয়েছে তাদের ব্যবহারকারীরা যে কথাবার্তা বলে বা যে ছবি বা ভিডিও শেয়ার করে তা যাতে কোনও লিক না হয় বা অন্য কেউ যাতে না তা দেখতে পারে তার জন্য এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন চালু করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিটির অর্থ, যে ডিভাইজ থেকে মেজেস বা অন্য কিছু পাঠানো হচ্ছে, এবং যে ডিভাইজের কাছে পাঠানো হচ্ছে শুধুমাত্র তারাই ওই বার্তা দেখতে পারবে।
এর মাঝে অবৈধভাবে ঢুকে বা মেসেজের গতিপথে বাধা তৈরি করে কেউ কোনও তথ্য দেখতে বা অ্যাকসেস করতে পারবে না। কোনও একটি বার্তা প্রেরক এবং গ্রহীতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এবিষয়ে WhatsApp-এর তরফে জানানো হয়েছে, কোনও ব্যবহারকারী WhatsApp ডাউনলোড করে ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রযুক্তিটি অন হয়ে যায়।
এর জন্য আলাদা করে কোনও সিক্রেট চ্যাট বা অন্য কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় না। Telegram-এর ক্ষেত্রে বিষয়টি তুলনামূলক ভিন্ন। এক্ষেত্রে সিক্রেট চ্যাট চালু করলে তবেই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন চ্যাট শুরু হবে। সংস্থার তরফে আরও জানানো হয়েছে, তারা সিগন্যাল এনক্রিপশন ডিভাইজ ব্যবহার করে।
এই প্রযুক্তিটি ২০১৩ সালে চালু করা হয়েছিল। যাই হোক, WhatsApp-এর তরফে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে তারা সমস্ত চ্যাট এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পদ্ধতির মধ্যে রাখে কিন্তু ব্যবহারকারীরা যে ভেন্ডর ব্যবহার করে সেখানে অনেক সময় এন্ড টু এন্ড প্রোটোকল মেনে চলা হয় না। যার কারণে চ্যাট লিক হয়।
চ্যাট কী ভাবে লিক হয়?
WhatsApp-এর মাধ্যমে চ্যাট লিক হওয়ার বিষয়টি মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে আসে। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও স্ক্রিন শট লিক হয়েছে। এটি মূলত তৃতীয় কোনও ব্যক্তির মাধ্যমে লিক হয়। প্রেরক ও গ্রাহকের ফোন থেকে কোনও মেসেজ বা ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে শেয়ার করে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি। যা তথ্য লিক বা মেসেজ লিক বলে বিবেচিত হয়।
এবিষয়ে সতর্ক করে WhatsApp-এর তরফে জানানো হয়েছে, “এটা ব্যবহারকারীদের মনে রাখতে হবে কোনও ব্যক্তি স্ক্রিনশট নিয়ে, বা ছবি তুলে শেয়ার করতে পারে। এমনকী WhatsApp-এর স্ক্রিনশট নিয়ে অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে পারে। যা সমস্যার কারণ হতে পারে।”
কিন্তু সম্প্রতি দু’টি ঘটনা এবিষয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলতে পারে। কয়েকদিন আগে বলিউড নায়িকা রিয়া চক্রবর্তী (Rhea Chakraborty) এবং শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) পুত্র আরিয়ান খানের (Aryan Khan) WhatsApp চ্যাট প্রকাশ্যে আসে। সেখানে অবশ্য কোনও স্ক্রিনশট নেই। প্রকাশ্যে আসে সরাসরি চ্যাট। এটা কী ভাবে সম্ভব?
এর পিছনে অন্যতম কারণ হল ওই দু’জনকে গ্রেফতার করার পর তাঁদের ফোনগুলি নিজেদের হেফাজতে নেয় তদন্তকারী দলের আধিকারিকরা। এবং এর পর ডিভাইজ থেকে সরাসরি মেসেজ অ্যাকসেস করা সম্ভব হয়। এমনকী ডিলিট করা মেসেজও প্রযুক্তির সাহায্যে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অন্য দিকে, ফোন ক্লোনিং-এর মাধ্যমেও WhatsApp চ্যাট লিক করা বা প্রকাশ্যে আনা সম্ভব।
এছাড়াও অনেকের ফোনে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি স্পাইওয়্যার সংযুক্ত করে দেন। এর ফলে ওই ফোনে যা কিছু মেসেজ বা অন্য যা কিছু অ্যাকসেস করা সম্ভব তা ব্যবহার করতে পারে হ্যাকাররা। এছাড়াও আরও একটি সাধারণ বিষয়ের জন্য WhatsApp চ্যাট লিক হতে পারে।
তা হল ক্লাউড স্টোরেজ। বর্তমানে WhatsApp চ্যাটের সমস্ত কিছু সঞ্চিত থাকে WhatsApp ক্লাউড স্টোরে। সেক্ষেত্রে ক্লাউড স্টোরেজ এনক্রিপটেড না থাকার জন্য ক্লাউড স্টোরেজ হ্যাক হলে WhatsApp চ্যাট লিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মার্ক জুকারবার্গের (Mark Zuckerberg) তরফে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার কারণে WhatsApp আরও একটি সিকিউরিটি লেয়ার যোগ করেছে। এর ফলে WhatsApp চ্যাট আরও সুরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি Google ড্রাইভে এবং Icloud-এ চ্যাট ব্যাক আপ নিলেও তা সুরক্ষিত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
WhatsApp কি ব্যবহারকারীদের তথ্য দেখতে পায়?
এবিষয়ে বিভিন্ন ল’ এবং এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির সঙ্গে সংঘাত লেগে গিয়েছে WhatsApp-এর। বার বার অভিযোগ উঠেছে তথ্য চুরি বা ব্যবহারকারীদের তথ্য অ্যাকসেস করে অ্যাপ সংস্থা। কিন্তু এবিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। আবার এটাও বলা সম্ভব নয় যে ব্যবহারকারীদের কোনও তথ্য ব্যবহার করে না WhatsApp।
তাদের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও মেসেজ ডেলিভার হওয়ার পর তা WhatsApp নিজেদের কাছে রাখে না। এদিকে প্রাইভেসি পলিসিতে বলা হয়েছে, কোনও অত্যন্ত প্রয়োজনে ব্যবহারকারীদের কোনও তথ্য অ্যাকসেস করতে পারে তারা।
কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের তথ্য অ্যাকসেস করতে পারে WhatsApp?
এবিষয়ে সংস্থার তরফে স্পষ্ট একটি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে মোট চারটি কারণে ব্যবহারকারীদের তথ্য অ্যাকসেস করতে পারে WhatsApp। ওই চারটি বিষয় হল- ১) ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনে কোনও আপগ্রেডেশনের দরকারে তথ্য অ্যাকসেস করে, ২) আইনি কোনও বিষয় নিয়ে তদন্ত করার প্রয়োজন হলে, ৩) আইনি কোনও প্রক্রিয়ার জবাবে অথবা সরকার কোনও তথ্য চাইলে, ৪) কোনও পলিসি বলবৎ করার প্রয়োজন হলে।
যদিও তথ্য অ্যাকসেস করা নিয়ে WhatsApp-এর উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে ProPublica নামে একটি সংস্থা। তাদের বক্তব্য, WhatsApp-এর টেক্সাস, সিঙ্গাপুর এবং ডাবলিন অফিসে প্রায় ১০০০ জন কর্মী রয়েছে, যাদের কাজ মূলত রিপোর্ট করা কোনও মেসেজ খতিয়ে দেখা। যদিও এবিষয়ে WhatsApp-এর তরফে জানানো হয়েছে, কোনও রিপোর্ট হওয়া মেসেজ তারা খতিয়ে দেখার সময় ব্যবহারকারী এবং যিনি রিপোর্ট করেছেন তাঁদের দু’জনেরই বক্তব্য খতিয়ে দেখা হয়।