আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নারী অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রতি দিলেও প্রতিনিয়তই মেয়েদের ওপর নানারকম বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিচ্ছে তালেবান। মেয়েদের চোখ-মুখ ঢাকা নিকাব ও বোরখা পরতে বাধ্য করা, শিক্ষাগ্রহণ, কর্মক্ষেত্রে যোগদান বা বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নিত্যনতুন বিধিনিষেধ যোগ করছে তারা। অনেক ক্ষেত্রেই এসেছে নিষেধাজ্ঞা। অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তালিকায় নাই কোনো নারী। এবার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যোগ হলো মেয়েদের খেলাধুলা।
কট্টর ইসলামপন্থী তালেবানদের সাংস্কৃতিক কমিশনের উপপ্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে ক্রিকেটসহ মেয়েদের সবধরনের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হবে। অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রচার মাধ্যম এসবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মেয়েদের খেলাধুলা অনুপযুক্ত ও অপ্রয়োজনীয়। আমি মনে করি না যে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেওয়া হবে। কারণ মেয়েদের ক্রিকেট খেলা তাদের জন্য উচিৎ বা প্রয়োজনীয় কিছু নয়। খেলতে গিয়ে তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে, যেখানে তাদের মুখ ও শরীর ঢাকা থাকবে না। ইসলাম নারীদের এভাবে চেহারা দেখানোর অনুমোদন দেয় না।’
‘এখন সময়টাই মিডিয়ার। খেলার ছবি ও ভিডিওর ছড়াছড়ি চারদিকে। ক্রিকেট বা অন্য খেলা, যেখানে মেয়েদের শরীর ও মুখমণ্ডল দেখা যাবে— এমন খেলার অনুমোদন ইসলাম ও ইসলামিক শাসনব্যবস্থা দেয় না,’— বলেন তিনি।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা অন্তর্বর্তীকালীন তালেবান সরকার পূর্বপ্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তাদের সরকার কাঠামো অন্তর্ভুক্তিমূলক না করে নিজ দলের কট্টরপন্থীদের দ্বারাই গঠন করেছে। অনুগত ও অপরাধের রেকর্ড থাকা ব্যক্তি দিয়ে গঠিত সেই সরকারে নেই অন্য কোনো জাতি বা নারী প্রতিনিধি।
এদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট নতুন এই মন্ত্রিসভায় কোনো নারী না থাকা, ট্র্যাক রেকর্ডে সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিতে উদ্বেগ জানালেও তারা বলছে, নতুন প্রশাসনকে শুধুমাত্র কর্মের দ্বারাই বিচার করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, চীন ও জাপানও নতুন এই তালেবান সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসা নিয়ে উদ্বেগ জানালেও নতুন সরকাকে পর্যবেক্ষণে রাখার কথা বলেছে।
নারী অধিকার বিষয়ে আফগান সরকারের আচরণই মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই পর্যবেক্ষণে প্রভাব ফেলবে। সম্পূর্ণ পুরুষ সদস্যদের দিয়ে গঠিত সরকার বা মেয়েদের খেলাধুলা বন্ধ করার পদক্ষেপ এক ধরনের অশুভ বার্তা দিচ্ছে।
এদিকে তালেবান সংস্কৃতি বিষয় উপপ্রধান মেয়েদের ক্রিকেটসহ সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধের ইঙ্গিত দিলেও আফগান ক্রিকেট বোর্ড এখনো কোন নির্দেশনা পায়নি। বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মেয়েদের ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে মেয়ে ক্রিকেটারদের পূর্ব নির্ধারিত কার্যক্রম এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে ক্রিকেটারসহ সব নারী খেলোয়াড় আফগানিস্তানের ভেতরেই আত্মগোপনে রয়েছেন। কোনো কোনো খেলোয়াড় এ-ও জানিয়েছেন, খেলা চালিয় গেলে তালেবান যোদ্ধারা তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মেয়েদের খেলাধুলায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রমাণ করে— ক্ষমতা দখলের পর তালেবান যাই বলুক না কেন, নারীদের প্রতি তাদের মনোভাব ঠিক ২০ বছর আগের মতোই আছে। এবারে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান শরিয়া আইন অনুযায়ী মেয়েদের কর্মক্ষত্রে যোগদানের সুযোগ উন্মুক্ত রাখাসহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নারীবিরোধী বিভিন্ন অবস্থানের কথাই উঠে আসছে তালেবান নেতাদের কাছ থেকে।
সারাবাংলা/আরএফ/