আব্দুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: তদবিরবাজদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে জেলা- উপজেলার বহুল আলোচিত বিজিবির হাতে আটক ভারতীয় হরিয়ানা রাজ্যের চোরাই গরু দুটির নিলাম সম্পন্ন হয়েছে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বসন্তপুর কাস্টমস গোডাউন অফিসে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার সময় এ নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। নিলামে সর্বোচ্চ দাতা কালীগঞ্জ উপজেলার গণপতি গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শেখ আজাদ আল ইমরান ভ্যাট ট্যাক্স সহ ২,৪৫,৫৭৫টাকা দিয়ে নিলামে গরু দুটি কিনে নেয়।
নিলাম কার্যক্রমের সময় সাতক্ষীরার কাস্টমস সুপার নাজমুল হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, বসন্তপুর বিসিবি ক্যাম্পের সুবেদার বন্দে আলী, মিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মাসুম হোসেন ও শিহাব হোসেন সহ সাংবাদিকবৃন্দ এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি এবং নিলামে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। উক্ত নিলামে ৩৭ জন গরু ব্যবসায়ী, কসাই সহ লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের মধ্যে সরাসরি ডাকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা শেখ আজাদ আল ইমরান ২, ৪৫,৫৭৫ টাকা দিয়ে ডেকে নেয় ওই সময় তিনি সাড়ে ১৭.৫% ভ্যাট ট্যাক্স এর ৩৬,৫৭৫টাকা দিয়ে গরু দুইটি গ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত :শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন এর মামা এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম ফজলুল হক এর শ্যালক পশ্চিম ধুম ঘাট গ্রামের চোরাকারবারি মহাসিন আলী সীমান্ত নদী পার করে চোরাই পথে ভারতীয় গরু,ছাগল এবং কুকুর এনে একটি মিনি ঘাটালের নামে গরুর ফার্ম করে তুলে চোরাকারবারীদের চোরাই পথে আনা গরু অল্প টাকায় কিনে নিজ ফার্মে মোটাতাজাকরণের নামে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
চোরাই পথে আনা দুটি ভারতীয় হরিয়ানা রাজ্যের গরু পাটকেলঘাটা থানার গরু ব্যবসায়ী খোঁড়া জাহাঙ্গীর নিকট বিক্রয় করে। বিক্রয় করা গরু দুটি দেবহাটা থানার কুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের আনিস গাজীর পুত্র ট্রলি চালক তাদের টলিতে পাটকেলঘাটা নিয়ে যাওয়ার সময়( ১০ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার সময় কালীগঞ্জের মৌতলা শিমু রেজা কলেজের সামনের রাস্তা হতে স্থানীয় জনতা ভারতীয় গরু সন্দেহে আটক করে। ওই সময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসলে খবর পেয়ে চোরাকারবারি মামা মহাসিনের গরু গরু ছাড়ানোর জন্য শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন ঘটনাস্থলে সরকারি গাড়িযোগে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চলে আসে। ওই সময় উত্তেজিত জনতা এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা তাই লিপ্ত হয়ে প্রভাব খাটিয়ে টলি গরু দুটি ছাড়িয়ে নেয়।
ওই সময় স্থানীয় জনতা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা কে জানায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি বিজিবিকে জানালে নীলডুমুর এ অবস্থিত ১৭ বিজিবি এর বসন্তপুর ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার বন্দে আলী নেতৃত্বে একটি টহল দল কালিগঞ্জ ফুলতলা মহাসড়ক হতে টলি সহ ভারতীয় চোরাই গরু দুটি আটক করে বসন্তপুর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। গরু ছাড়ানোর জন্য গরুর মালিক চোরাকারবারি মহাসিন রতনপুর হাটের ইজারাদার রুহুল কুদ্দুসের নিকট হতে ওই রাতে দুটি ভুয়া ভাউচার রশিদ নিয়ে বসন্তপুর ক্যাম্পে গেলে সেটা ভুয়া প্রমাণিত হয়। ওই সময় বিজিবি সদস্যরা গরু দুটির জব্দ তালিকা করে বসন্তপুর কাস্টমস অফিসে রাত ৯ টার সময় জমা দেয়।
এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে ক্যাম্প হতে চোরাকারবারি মহাসিন পালিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় ১২ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে রতনপুর বাজারের ইজারাদার রুহুল কুদ্দুস বিজিবি ক্যাম্প ভুয়া রশিদের মুড়ি বই দেখাতে না পেরে গরু দুটি ভারতীয় বলে শনাক্ত করে এবং এই গরু হাটে বিক্রি হয়নি বলে লিখিত প্রত্যায়ন পত্র বিজিবি নিকট হস্তান্তর করে। অবস্থা বেগতিক দেখে চোরাকারবারি মহাসিন তার ভাগ্নে আতাউল হক দোলন কে সাথে নিয়ে বিজিবি এর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদবির ও ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে কোনো উপায়ান্তর না দেখে গরু ক্রেতা খোঁড়া জাহাঙ্গীরকে প্রতিবন্ধী সনদ বানিয়ে সাংবাদিকদের চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে জেলা প্রশাসক বরাবর গরুফেরত পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করে।
বিষয়টি নিয়ে তার ভাগ্নে উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ১৩ফেব্রুয়ারি জেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে উত্থাপিত হলে ওই দিনেই নিলামে স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ভারতীয় গরু প্রমাণিত হয় বৃহস্পতিবার কাস্টম কর্তৃপক্ষ এ নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করে।