ডেস্ক রিপোর্ট:: বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নদনদী নাব্যতা সংকটে ভুগছে বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলার জহুর হোসেন মিলনায়তনে সবুজ আন্দোলনের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার ও জনগণের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনটি এ দাবি করে।
সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, পৃথিবীর অন্যতম নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। অসংখ্য নদী বেষ্টিত বাংলাদেশ ইতিহাসের পাতায় সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে নদীর জন্য বিখ্যাত। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া আর বদ্বীপ হিসেবে ইতিহাসবিদদের কাছে এক স্বর্গরাজ্যের নাম বাংলাদেশ। সময়ের পরিক্রমায় নদীমাতৃক বাংলাদেশ অভিশপ্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। চলতি আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নদীর নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ জনগণ। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ভয়াবহতা তুলে ধরতে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। সবুজ আন্দোলন তথ্য ও গবেষণা পরিষদ জেলা কমিটির মাধ্যমে জেলাভিত্তিক গবেষণা চালিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নদীর নাব্যতার সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে বর্তমানে ১০০৮টি নদী থাকলেও যার শতকরা ৯০ ভাগ নদী নাব্যতা সংকটে ভুগছে। ইতোমধ্যে দেশের শতাধিক নদী বিলীন হয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশে ২৪১৪০ কিলোমিটার দূরে জলরাশি প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পাড় দখল ও দূষণে জর্জরিত। জেলাভিত্তিক জরিপে দেখা গেছে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শতকরা ১০০ ভাগ নদী দখল ও দূষণের শিকার। সামগ্রিক অর্থে নদীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন হতে পারত বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু বর্তমানে তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে নদীর দখল বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমানে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে এসময় বেশ কিছু সুপারিশ উপস্থাপনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– আন্তর্জাতিক নদীতে উজানের দেশ কর্তৃক বাঁধ নির্মাণ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরণের জন্য নতুন বাজেট প্রণয়ন করে নদী খনন শুরু করা। দেশের সব নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করা। নদীমাতৃক অর্থনৈতিক গুরুত্ব তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত আবাসন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিলুপ্তপ্রায় নদীর গতি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ম্যাপে যেসব নদীর অস্তিত্ব রয়েছে তা পুনরায় খননের ব্যবস্থা করা।