আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ঘুমন্ত’ রাজনৈতিক দল বিকল্পধারাকে জাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একাদশ নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সেজন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি দলকে চাঙ্গা করতে আগামী ১০ জুন দলটির কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। তার আগে, চলতি মাসে বিকল্পধারার ঢাকা মহানগর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, এবারও মহাজোটের সঙ্গে থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিক্ল্পধারা বাংলাদেশ। সেজন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনে বিকল্পধারার পক্ষ থেকে ২০টি আসন চাওয়া হতে পারে। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলটির প্রার্থী সংখ্যা বাড়বে। সেক্ষেত্রে তারা অর্ধশতাধিক আসনে প্রার্থী দিতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিন্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত নির্বাচনে মহাজোটের কাছে ১০টি আসন চায় বিকল্পধারা। কিন্তু তাদের মাত্র তিনটি আসন দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি আসনে তাদের প্রার্থী জয়লাভ করেন। তারা হলেন- মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ও মাহি বি চৌধুরী।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিকল্পধারা পরিচালিত হয় মূলত ডা. বদরুদ্দোজা চোধুরী ও তার ছেলে মাহি বি চৌধুরীর সিদ্ধান্তে। তবে মাহি বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন। সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি মাঝে মধ্যে দেশে এসে অধিবেশনে যোগ দেন। এর বাইরে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতা নাই তার।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মাহির অনুপস্থিতির কারণে বর্তমানে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম বৈঠকসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের সব জেলা তো দূরের কথা, ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলায় বিকল্পধারার যে কমিটি আছে সেগুলোও পূর্ণাঙ্গ নয়। এসব কমিটি একেবারে বিকল হয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে কমিটি থাকলেও সেগুলো সচল নয় বলে জানান দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য।
এসব বিষয় জানতে দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। দলের প্রেসিডেন্ট ডা. বি চৌধুরীও ফোনে কথা বলেন না। তবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মজাহারুল হক শাহ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
মজাহারুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে রাজনীতি করি। তবে কোভিডের কারণে বিকল্পধারা রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নিতে পারেনি। কিন্তু কোভিড নিয়ন্ত্রণে আসার পর দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচি একেবারেই যে ছিল না- তা বলা যাবে না। বিকল্পধারা ঘুমিয়ে ছিল না বা বিকল হয়ে যায়নি। আমরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ১০ জুন দলের কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমরা মাহাজোটের সঙ্গে থেকে নির্বাচনে অংশ নেব।’
আসছে নির্বাচনে মহাজোটের কাছে কয়টি আসন চাইবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহাজোটের কাছে কয়টি আসন চাইব বা তারা কয়টি দেবে সে বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠাতা ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) ছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন বি চৌধুরী। পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার মাজার জিয়ারত করতে না গেলে বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বি চৌধুরী। বছর দুয়েক বিরতির পর তিনি ২০০৪ সালে গঠন করেন বিকল্পধারা। কিন্তু ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর বিকল্পধারা ভেঙে যায়। একটি অংশ অধ্যাপক নুরুল আমীন বেপারীকে সভাপতি ও দলের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলকে মহাসচিব করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে। এর পর থেকে এই গ্রুপটি তাদের মূল বিকল্পধারা বলে দাবি করে আসছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম