কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে ‘ব্যাচের মিটিংয়ে’ যাওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৪ অক্টোবর দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগ উঠেছে।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ১০০৪ নাম্বার কক্ষে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
শিক্ষার্থী দুইজন হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কাউসার ও একই শিক্ষাবর্ষের একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশনস সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম। প্রতিবেদনের স্বার্থে দুইজনের সাথে কথা বলতে গেলে তারা দুইজনই তাদের শরীরে থাকা আঘাতের চিহ্ন দেখান।
মোহাম্মদ কাউসার দাবি করেন তৌহিদুল ইসলাম ছাত্রদলের একজন কর্মী। তবে এই দাবিকে অস্বীকার করেছেন তৌহিদুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র মতে জানা যায়, ১৮ তম ব্যাচের অনেক শিক্ষার্থী হলে এসে হলের বিভিন্ন বড় ভাইদের রুমে থাকছিল। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, হলে আগত নতুন শিক্ষার্থীদের প্রশাসন সিট বরাদ্দ দিলে উঠবে বলে ঘোষণা দেয়ায়; আগত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এই ব্যাপারে আলোচনার জন্য হলের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মিটিংয়ের ডাক দেন। সেই মিটিংয়ে ১৭ ব্যাচের দুইজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তখন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউসারকে ডাকতে যায় তৌহিদ। ১০০৪ নম্বর রুমে ডাকতে গিয়ে এক পর্যায়ে তৌহিদ উত্তেজিত হয়ে কাউসারকে মারধর করে। পরবর্তীতে কাউসারও তৌহিদকে মারতে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আমিন বলেন, আমি কাউসারের রুমমেট এবং আমি রুমেই ছিলাম। ওইদিন রাতে ব্যাচের একটা মিটিং ছিলো। কাউসার রুমে শুয়ে ছিলো। ১১ টার দিকে তৌহিদ রুমে আসে ডাকতে। কিন্তু কাউসার যাবে না বললে তাকে টান দিয়ে নিয়ে যেতে চায়। পরবর্তীতে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তৌহিদ রুমে থাকা কাঠ দিয়ে কাউসারকে মারে। পরবর্তীতে কাউসারও তাকে আঘাত করতে গেলে সেটি তার (তৌহিদ) গায়ে লাগেনি৷
এ বিষয়ে মোহাম্মদ কাউসার বলেন, ২৪ তারিখ রাতে আমি ঘুমিয়ে যাই তখন তৌহিদ এসে আমাকে ডেকে তোলে এবং বলে মিটিং আছে যেতে হবে। আমি মানা করি, বলি ঘুমাবো, যেতে পারবো না। কয়েকবার জোরাজুরি করার পর ও টান দিয়ে আমার মশারি ছিড়ে ফেলে তখন আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে বলি। কিছুক্ষণ পর সে তার রুমমেট নিবিরসহ হাতে একটি লাঠি নিয়ে আসে এবং আমার মাথা বরাবর আঘাতের চেষ্টা করে। আমি হাত দিয়ে নিজেকে রক্ষা করি। তৌহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনের কর্মী।
এ বিষয় জানতে চাইলে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ১৭ ব্যাচের সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ার জন্য, কথা বলার জন্য বসতে চাইছিলাম। তখন আমি কাউসারকে ডাকতে তার রুমে যাই। সে শুয়ে ছিলো, আমি তাকে আসতে বললে সে আসতে চায়নি। তাকে আমি টান দিয়ে আনতে চাইলে সে আমাকে ধাক্কা দেয়। এরপর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রুমে থাকা একটি কাঠের টুকরা দিয়ে তাকে আঘাত করি, সে-ও আমাকে আঘাত করে।
তবে তিনি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই, আমার পরিবারের কেউও রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তৌহিদ আমাদের দলের কোন কর্মী না। কেউ অভিযোগ করলেই তো আর কর্মী হয়ে গেলো না। আমাদের নাম জড়িয়ে এমন অপপ্রচার আমাদের দলের জন্য বিব্রতকর।’
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ মো: জিয়া উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। তবে আমি এখনো কোনো অভিযোগপত্র পাইনি৷ ওই শিক্ষার্থীকে আগামীকাল সরাসরি এসে অভিযোগপত্র দিতে বলেছি। আর আমরা দুইপক্ষের সাথেই কথা বলছি। কালকে অফিসিয়ালি সে যদি অভিযোগপত্র দেয়, তাহলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো।