ময়মনসিংহে ২০০১ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী কানিজ ওরফে তানিয়াকে বটি দিয়ে জবাই করে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পরবর্তীতে নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি গিয়ে প্রথম স্ত্রী শিরিনাজ বেগমকে এবার দা দিয়ে জবাই করে হত্যার দায়ে ময়মনসিংহ সদরের ফকিরাকান্দা বয়রা এলাকার ফখরুল ইসলাম (৬০)কে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফখরুল ইসলাম ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ফকিরাকান্দা বয়রা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) দুপুরে ময়মনসিংহ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার বরাত দিয়ে আসামিপক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত আইনজীবী মোকাম্মেল হক শাকিল বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে ২০১২ সালের ২৬ মার্চ বিকেলে ফখরুল ইসলাম তাঁর ঘুমিয়ে থাকাপ্রথম স্ত্রী শিরিনাজ বেগমকে বটি দিয়ে জবাই করিয়া হত্যা করে। এই হত্যার দায়ে আসামি ফখরুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কানিজ ওরফে তানিয়াকে হত্যার দায়ে ২০০৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন আদালত। ছয় মাস সাজাভোগের পর নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করে ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
আর শিরিনাজ হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় পুলিশ ওই বছরের ২২ আগস্ট ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আইনজীবী মোকাম্মেল হক শাকিল আরও বলেন, মামলা চলাকালে আসামি নিজেকে ফের মানসিক রোগী দাবি করলে আদালতের নির্দেশে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে সুস্থ্য ঘোষণা করে।
একইসঙ্গে ২০০১ সালের মামলার ঘটনার সময়ও তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে দাবি করলে পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে আদালত নিশ্চিত হয় যে, ওই সময়েও তিনি স্বাভাবিক ছিল বিধায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি না করে ফেরত পাঠায়। যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত অবস্থায় জামিনে মুক্তি পেয়ে আসামি দ্বিতীয়বার একই ধরনের অপরাধ
সংঘটিত করেছেন বলে আদালত প্রমাণ পায়। সেই প্রেক্ষিতে ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৩০৩ ধারায় নির্ধারিত বিধান অনুসারে একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়।
মামলায় ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত অবস্থায় নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফখরুল দ্বিতীয়বার একই ধরনের অপরাধ করায় মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, পাবলিক প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা কবীর উদ্দিন ভূঁইয়া। আসামিপক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন মোকাম্মেল হক শাকিল।