রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহেই স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হলে ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়া সাপেক্ষে এই দুই পর্যায়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর দরজা খুলতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হলে তোলার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করতে আগামী সপ্তাহেই ফের বৈঠকে সভায় বসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি।
শিক্ষার্থীদের হলে ফেরানোর এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিক হলগুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে সংস্কার কাজ। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী-শূন্য থাকা হলগুলোর বিভিন্ন অংশের মেরামত করা এবং হলে ফেরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করতে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কবি জসীমউদ্দিন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ঘুরে দেখা গেছে— দীর্ঘ দেড় বছর সময়কাল শিক্ষার্থী-শূন্য থাকা হলগুলোর বিভিন্ন অংশে চলছে মেরামতের কাজ। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলগুলোর মূল ফটকে হাত ধোয়ার বেসিন নির্মাণ, নষ্ট হয়ে যাওয়া ওয়াশরুম সংস্কার, ধূলো-ময়লায় মলিন হওয়া দেওয়াল-সিঁড়িতে রঙ করার কাজ চলছে পুরোদমে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল বাছির সারাবাংলাকে বলেন, ‘হলের বিভিন্ন অংশে কাজ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হলে তোলা হবে।’
শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোর যেসব জায়গা বেশি ব্যবহার করে, সেসব জায়গায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে বলে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা ক্যান্টিন, রিডিং রুম, মেস, মসজিদ— অর্থাৎ যে জায়গাগুলোকে আমরা কমন ফ্যাসিলিটিজ বলছি, এই জায়গাগুলোতে কিছু সংস্কারের কাজ করছি। এছাড়া অবকাঠামোগত অন্যান্য উন্নয়ন কাজও চলমান আছে।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মান পরিচলন পদ্ধতি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বে আবাসিক হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের সমন্বয়ে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
আবাসিক হল ও হলের বাইরে অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়— এই দু’টি ধাপে এই এসওপি নীতিমালা বাস্তবায়নের চিন্তা-ভাবনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসওপি প্রসঙ্গে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবাসিক হলগুলোর ক্ষেত্রে এসওপি’র অধীনে আবাসন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা— এই তিনটি পর্যায় রয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই রুমের মেঝেতে থাকতে পারবে না। এ ছাড়া স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় রুমে ঢোকার আগে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা, ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিভিন্ন বিষয় এর মধ্যে রয়েছে।’
আবাসিক হলগুলোতে কোনো শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির। তিনি বলেন, ‘এসওপি’র অধীনে চিকিৎসা নিয়ে নীতিমালা আছে। আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করা কোনো শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা রাখা হবে।’
এছাড়া বিভাগগুলোর ক্লাসরুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিধিমালাও সন্নিবেশিত আছে এসওপি নীতিমালায়। অধ্যাপক আব্দুল বাছির বলেন, ‘নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসাতে হবে। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে নীতিমালায় বলে দেওয়া আছে।’
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোন তারিখে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলগুলোর দ্বার খুলছে— তা নির্ধারণ করতে আগামী সপ্তাহেই সভায় বসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি। এই কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর দিনক্ষণ ঠিক করতে আগামী সপ্তাহেই কমিটি মিটিংয়ে বসবে। সেখানেই এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
প্রথম ধাপে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার পর তাদের পরীক্ষা শেষ হলে আগামী নভেম্বর মাসে পর্যায়ক্রমে স্নাতক তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে ফেরানোর পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন— বলছেন অধ্যাপক গোলাম রব্বানী।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর