স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০ শতাংশ কৃষি খাতে বরাদ্দ, ফসলের লাভজনক দাম ও গ্রামীণ রেশনিংসহ ১২ দফা দাবিতে অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে কৃষক ফ্রন্ট।
বুধবার (১ জুন) কৃষক ফ্রন্টের নেতারা এই স্মারকলিপি পেশ করেন। এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক এখনো কৃষিতে নিয়োজিত। করোনাকালে এ খাত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মানুষদের বাঁচিয়ে রেখেছে। অথচ এই খাতকে অবহেলা করা হচ্ছে। কৃষি খাতে বরাদ্দ দিন দিন কমছে। মৌসুমে প্রতি ইউনিয়নে ক্রয়কেন্দ্র খুলে ১২০০ টাকা মণ দরে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানান তিনি।
বজলুর রশীদ ফিরোজ আরও বলেন, কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। ফলে ক্ষেতমজুরদের জন্য সারাবছরের কাজ ও আর্মি রেটে রেশন দিতে হবে। ভিজিডি, ভিজিএফসহ সব গ্রামীণ প্রকল্পের দুর্নীতি-দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। বেকারত্ব দূর করতে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনসহ কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর-আদিবাসীদের উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ কৃষি খাতে বরাদ্দ দিতে হবে।
সমাবেশে রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, দেশের ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ কৃষক বন্যায়-খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ১০-২০ হাজার টাকা কৃষি ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় সার্টিফিকেট মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানায় হয়রানির শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সহজ শর্তে কৃষি ঋণ দেওয়াসহ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ সুদসহ মওকুফে কৃষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। কৃষকদের শস্য বিমা চালু, নদী-খাল-জলাশয় দখল-দূষণ বন্ধ এবং আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিতসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে বক্তারা কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান; চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো; এবং বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তারা ভিজিএফ, ভিজিডি, কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সামাজিক সুরক্ষা খাতে উপকারভোগীর আওতা বাড়ানো ও বরাদ্দ বাড়িয়ে দলীয়করণ, দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানান। কৃষিভিত্তিক শিল্প, বন্ধ পাটকল, চিনিকল অবিলম্বে চালু, গ্রামীণ ক্ষেতমজুর-কৃষকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করারও দাবি জানান।
সমাজতান্ত্রিক খেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, শফিউর রহমান, আদিবাসী নেতা রবিউল টুডু।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ। সমাবেশ পরিচালনা করেন কৃষক ফ্রন্টের দফতর সম্পাদক নিখিল দাস। সমাবেশ শুরুর আগে গণসংগীত পরিবেশন করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কুষ্টিয়া জেলার সংগঠক আব্দুল মান্নান।
সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাব থেকে মিছিল শুরু হয়ে তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন, জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান ঘুরে সচিবালয়ের গেটে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর