স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্য ভূ-মধ্যসাগরে কার কার সলিল সমাধি হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিষয়টি জানতে চান।
এর আগে, ৫ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতিসংঘ নয়, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের একটি তালিকা দিয়েছিল। পরে দেখা গেল, ভূমধ্যসাগরে অনেক লোকের সলিল সমাধি হয়েছে।’
একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। যেই গুম হচ্ছে, কিছুদিন পরেই তাকে আমরা পাচ্ছি। অনেকেই নানা কারণে আত্মগোপন করে থাকে, সেগুলোকে গুম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে কেউ গুম হয় না।’
দুই মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো যে গুমের সঙ্গে জড়িত, সেই সব ঘটনার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন। ভিডিও ফুটেজও আছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন থেকেও গুমের ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা তদন্ত করে জাতিসংঘে গুমের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গুমের শিকার ৮৬ ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে ‘যেখানে কোনো আলো পৌঁছায় না: বাংলাদেশে গুমের এক দশক’ শিরোনামে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।”
তিনি বলেন, ‘এর আগে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপেয়ারেন্সেস কর্তৃক বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এর পর বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যরা সরকারের নির্দেশে দফায় দফায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার নামে হয়রানি করে। এছাড়া পুলিশ সদস্যরা গুমের শিকার ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন এবং পরিবার তথ্য গোপন করেছে এই মর্মে কাগজে সই দেওয়ার জন্য ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।’
রিজভী বলেন, “বিরোধী শক্তিকে দমন করতে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, নিপীড়নের কথা আজকে বিশ্ব দরবারে প্রমাণিত। তাই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারের মন্ত্রীরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এসব অবিবেচনা প্রসূত, ঘৃণ্য বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ছাতার নিচে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গোটা জাতিকে গুম-খুনের নিষ্ঠুর নির্যাতনে ‘খাঁচাবন্দি’ করে রেখেছে।”
‘প্রশ্ন হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি মনে করেন, ‘গুমের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত নয়’ তাহলে তাকেই জবাব দিতে হবে গুমের সঙ্গে কারা জড়িত ? কে বা কারা একের পর এক মানুষ গুম খুন করছে? গুমের তালিকায় থাকা কোন কোন ব্যক্তির ভূ-মধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে? বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ শত মানুষকে ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার গুম করেছে। তাদের কার কার ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে- এর জবাব বিনাভোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিতে হবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে, গুম হওয়া বা তার ভাষায় ভূ-মধ্যসাগরে সলিল সমাধি হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা তার কাছে আছে। অবিলম্বে সেই তালিকা প্রকাশ করা হোক।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম