স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং উচ্চ কক্ষের আইনসভা প্রবর্তনের পাশাপাশি টানা দুই বারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না বলে প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের বলরুমে রাজনীতিবিদ-পেশাজীবী- সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন যে ২৭ দফা রুপরেখা ঘোষণা করেন, সেখানে এ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
রূপরেখায় উল্লেখিত ২৭টি ধারার মধ্যে ৫ নম্বর ধারায় ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন না।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুন:গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচরে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সমন্বয়ে একটি জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐক্যমত্যের সকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই ‘জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার’ রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।”
‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে’ ২৭ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে— নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করা, উচ্চ কক্ষের আইনসভা, সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তন, সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতামত প্রদানের সুযোগ দিতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ আইন সংশোধন, জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তন, মিডিয়া কমিশন ও অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার।
এছাড়া সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষ্যমহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করার কথাও রুপরেখায় বলা হয়েছে। এজন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে বিএনপির ঘোষিত রূপরেখায়।
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যের ‘এনএইচএস’ আদলে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা প্রর্বতন, এক বছরব্যাপী বা আত্মকর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখায়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরুউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্ল্হা আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুল কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মাহবুবে রহমান শামীম, বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, আসাদুজ্জামান, আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার, রুমিন ফারহানা, শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এবিএম আবদুস সাত্তার, রিয়াজউদ্দিন নসু, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
সমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামে মোস্তফা মোহসিন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন, হাসিব উদ্দিন হোসেন, জেএসডির কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ২০ দলীয় জোটের জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজরু রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম খান, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুতফর রহমান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী প্রমুখ।
পেশাজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরি এস এ ইসলাম, অধ্যাপক একেএম আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাছিন আহমেদ, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, জাহানারা বেগম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এজেডএম জাহিদ হোসেন ও কাদের গনি চৌধুরী, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, এম আবদুল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, মোস্তফা কামাল মজুমদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ।
আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে বসতে দিয়ে বিএনপি নেতারা মাঝখানের বিভিন্ন টেবিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেন। জনাকীর্ণ এ অনুষ্ঠানে কোনো বিদেশি কূটনীতিক বা মিশনে কর্মরত কাউকে দেখা যায় নি। রূপরেখা ঘোষণার পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে চাইলেও তাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। খুব দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
সারাবাংলা/এজেড/এনইউ