Last Updated:
২০ রাজ্যকে হারিয়ে এবার সুরজ সরেন পাড়ি দেবে ফুটবল খেলতে শ্রীলঙ্কায়, কিন্তু অভাবের তাড়নায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে পরিবার, ভাঙাচোরা ঘরে বেড়ে ওঠা এক রত্তি সুমন অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল খেলায় রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছে, কিন্তু এবার কি হবে?
বাঁকুড়া: “এ যেন পাঁকে ফুটেছে পদ্মফুল” বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ব্লকের কুলুপুকুর গ্রামে দিন আনি দিন খাওয়া সংসারে মা বাবা বোনের সঙ্গে বেড়ে ওঠা দশম শ্রেণীর সুরজ সরেন ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতো রোলান্ডোর মত একদিন ফুটবল খেলবে। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। তার এই অদম্য জেদ আর ফুটবলের প্রতি ভালবাসা রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করল।
স্কুলে লেখাপড়ার ফাঁকে পাশের গ্রামে সুরজ তার পাড়াতুতো কাকার কোচিং এ ফুটবল খেলা শিখতে যেত। অভাবের তাড়নায় বহুদিন তাকে খালি পায়েই খেলতে হয়। এখানেই তার খেলার ধরন পায়ের স্কিল দেখে তার কাকার মনে হয় ফুটবল নিয়ে এই ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কয়েক মাস আগে সুরজের জন্য আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তার কাকা জানতে পারে ১১ই মে মধ্যপ্রদেশে হতে চলেছে অনূর্ধ্ব ১৭ ও অনূর্ধ্ব ১৯ নাইন-এ-সাইড ফুটবল প্রতিযোগিতা। সময় বিলম্ব না করে সুরজকে নিয়ে তার কাকা ছুটে যায় দিঘায় সিলেকশনে। সিলেকশন পর্ব শেষ করে সুরজ ফিরে আসে বাড়িতে। হঠাৎ করেই তার বাড়িতে আসে চিঠি ১১ই মে মধ্যপ্রদেশে বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল খেলতে যেতে হবে তাকে। চিঠি পাওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি প্রস্তুত।
১১ই মে সুরজ পৌঁছায় মধ্যপ্রদেশে একের পর এক রাজ্যকে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠে বাংলার অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল দল। ফাইনালে মুখোমুখি হয় পড়শী রাজ্যের ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে। এখানে নির্ধারিত টাইম এর আগে দুই এক গোলে জয়লাভ করে বাংলার অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল দল। এই প্রতিযোগিতায় এটাকিং মিডফিল্ডরে খেলা সুরজ মোট চারটি গোল করে। দশটি গোল অ্যাসিস্ট করে, মন কারে বিচারকদের, বেস্ট গোল অ্যাটাকিং এর পুরস্কারের খেতাব ছিনিয়ে নেয় সুরজ সরেন।
সুরজ নজরে আসে বাংলার অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল দলের চেয়ারপারসন দীপ কুমার মাহাতোর। পুরস্কার হাতে নিয়ে সুরজ ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে শুভেচ্ছার বন্যা গ্রামবাসী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের। হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গ অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয় এবার সুরজ সরেনকে খেলতে হবে ভারতবর্ষের হয়ে। আগামী সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাউথ এশিয়ান গেম। এখানেই ভারতবর্ষে অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল টিমে বাংলার থেকে চান্স পায় দুই ফুটবলার। তার মধ্যে একজন সুরজ সরেন। যার ফলে খুশির হওয়া এলাকা জুড়ে।
তবে এই খুশির মধ্যেই কপালে চিন্তার ভাঁজ, সিঁদুরে মেঘ দেখছে তার পরিবারের লোকজন। শ্রীলংকায় যেতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন, পাসপোর্ট তৈরি করতে হবে। কিন্তু এত টাকা তো তাদের কাছে নেই! বাবা মা লোকের দুয়ারে কাজ করে কোনমতে সংসার চালায়। ভাঙাচোরা ঘরে চারজন কোনমতে বসবাস করে। তার বাবার দাবি ঝড় বৃষ্টির সময় সে বাড়িতে একা থাকে প্রাণভয়ে ছেলে মেয়েকে পাশের বাড়ি রেখে আসে । এই পরিস্থিতিতে সুরজ সরেন এবং তার পরিবার সরকারি সাহায্যের আরজি জানাচ্ছে। এখন দেখার অভাব অনটনকে ঘুচিয়ে দেশের হয়ে ফুটবল খেলতে এবার বিদেশে পাড়ি দিতে পারে কিনা সুরজ সরেন সেটাই দেখার!
Kolkata,West Bengal
June 08, 2025 9:43 AM IST