সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কঠিন পরিস্থিতিতে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। সংকটকালের এই ঈদে সংযম ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে অসহায়, দুঃস্থ ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সাধারণ সময়ে ঈদে নেতারা এলাকায় এলাকায় সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে আনন্দ-উৎসবে সামিল হলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। একদিকে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ, অন্যদিকে ঈদের পরপরই কঠোর বিধিনিষেধ— দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই তাই ঈদ করছেন ঢাকায়।
আওয়ামী লীগ নেতারা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহা উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে যে সাহসী নেতৃত্বে দিয়ে জীবন-জীবিকার চাকাকে সচল রেখেছেন, বিনামূল্যে মানুষের জন্য ভ্যাকসিন অধিকার নিশ্চিত করার লড়াই করছেন, এটি তাদের সাহস জোগাচ্ছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এবারের ঈদে তাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে অসহায় দরিদ্র কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কারণ ঈদের দুই দিন পরেই আবার কঠোর বিধিনিষেধ কার্যক্রম শুরু হবে। তাই ঈদে স্বাভাবিক আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপনের পাশাপাশি মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানুষের পাশে থাকাই হবে প্রধান লক্ষ্য।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ঊর্ধ্বগতির কারণে তারা যথাসম্ভব যে যেখানে অবস্থান করছিলেন, সেখানেই ঈদ করবেন। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ নেতাই ঈদে থাকছেন ঢাকায়। আর ঢাকাতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব সীমিত পরিসরেই থাকছে তাদের ঈদ আয়োজন।
করোনা মহামারির শুরু থেকেই গণভবনে একরকম ‘বন্দিদশা’ পার করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেছেন, করোনার এই সংকটে কোথাও বের হতে না পেরে জেলখানার বন্দির মতো অনুভূতি হচ্ছে তার। সেই ‘বন্দিদশা’র অবসান ঘটছে না এই ঈদেও। সরকারি বাসভবন গণভবনেই কাটবে তার ঈদ। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত তিনটি ঈদের মতো এবারও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে অডিও ও ভিডিওবার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। শুভেচ্ছাবার্তায় কোরবানির ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চান না দলের অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও। দলের অধিকাংশ নেতারাই এবার ঈদ করবেন ঢাকায়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় নিজ বাসাতেই থাকবেন ঈদে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্যাহ, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানসহ বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতাই ঢাকায় নিজ বাসায় কাটাবেন ঈদ।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম তার নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন। এস এম কামাল হোসেন ঢাকার বাসায় ঈদ করবেন। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঈদ করবেন গ্রামে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং বি এম মোজাম্মেল হকও ঢাকায় ঈদ করবেন।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য সদস্যরাও ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে করোনা মহামারির সব সংকট কেটে যাবে— এটিই পবিত্র ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা। দেশবাসীর প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ ও সুস্থ থাকার পাশাপাশি অসহায় দরিদ্র কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। আমাদের দলের নেতাকর্মীরাও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাড়া দিয়ে অসহায় খেটে খাওয়া কর্মহীন মানুষের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির শুরু থেকেই দলের নেতাকর্মীরা মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা মানুষের পাশে আছি, মানুষের পাশে থাকব। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজন্মই জনগণের জন্য রাজনীতি করেছে। সংকট দুর্যোগে জনগণের সঙ্গে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বাঙালিদের কাছে চারটি উৎসব সবচেয়ে বড় উৎসব— ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গা পূজা আর নববর্ষ। কিন্তু গত দেড় বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেই উৎসব মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে পারছে না। করোনা মহামারি আমাদের জীবনের চলার পথকে থমকে দিয়েছে। সীমাবদ্ধতায় নিয়ে এসেছে। আমরা মনে করি, এই মহামারির মধ্যে ঈদুল আজহার মূল লক্ষ্য অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপনের যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটি সবাইকে পালন করতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সমাজের বিত্তবান মানুষ যারা আছেন, তারা এই মহামারির সময় ঈদুল আজহায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন— এটিই আমরা প্রত্যাশা করি।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর