স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: সরকার হঠাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
তিনি জানান, সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রেক্ষিতে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সম্প্রতি জ্বালানি সরবরাহের ব্যর্থতায় ডিজেল চালিত কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও কুইক রেন্টালে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়। সভা মনে করে যেখানে বিদ্যুৎ বোর্ড জ্বালানির অপ্রতুলতার কারণে সবকয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করতে পারছে না, উৎপাদন না করেও শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করছে সরকার সেখানে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে।’
‘মানুষের কষ্টর্জিত আয়ের টাকা সরকারের ট্যাক্সের মাধ্যমে কেটে নিয়ে অনৈতিকভাবে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে দেওয়ায় তাদের দুর্নীতির আরেক চিত্র উদঘাটিত হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করার জন্য আহ্বান জানানো হয় স্থায়ী কমিটির সভায়’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের (মূল ওষুধ) ৫০টি ব্রান্ডের ওষুধের দাম প্রায় ৫০% থেকে ১৩৪% পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে স্থায়ী কমিটির সভায়। সভা মনে করে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য যখন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে সেই সময় গুটিগতক ব্যবসায়ীকে মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার জন্য অনৈতিকভাবে ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি করছে। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সভায় গত ২২ আগস্ট হতে লোডশেডিং, জ্বালানি তেল, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে ভোলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের নূর আলম, নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী আন্দোলনে অসংখ্য নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ও পুলিশী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।’
‘এসব হামলায় পুলিশের গুলিতে অনেকের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে আহত হয়েছে অসংখ্য, হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করছে। সভায়, ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী এই সরকারের দমন নীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘আপনারা যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলছেন। ২০ দলীয় জোট কি আছে?’- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব দলকে নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি, যুগপৎ আন্দোলন করব।’
জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব দলের সঙ্গেই কথা বলছি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারাই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, তাদের সবার জন্য আমাদের দরজা খোলা। সবাইকে নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব।’
সারাবাংলা/এজেড/এমও