আজকাল শহরে ঘরে বসে অনলাইনে মুখরোচক সব খাবার যেমন পিজ্জা, বার্গার, বিরিয়ানি অর্ডার করা যায় । দিন দিন অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিস খুবই জনপ্রিয় ও সহজলভ্য হয়ে উঠছে। তবে গ্রামে এসব ফুড ডেলিভারি সার্ভিস এখনও ততটা বিস্তৃত না। এই অভাব পূরণ করতেই এ সকল মুখরোচক সব খাবার গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন তিন বোন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের এসব খাবার মিলছে।
কয়েক মাস ধরে চলছে তিন বোনের অনলাইন রেস্তোরাঁ। চাহিদা মতো সব খাবার মিলবে এখানে। শুধু অর্ডার দিতে হবে দুই ঘণ্টা আগে।
করোনায় আরো অনেক পরিবারের মতোই অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে জাকিয়ার পরিবার। করোনায় বাবার কাপড়ের ব্যবসায় ধ্বস নামার কারণে চিন্তিত হয়ে পড়ে তিন বোন। এই অলস সময়টায় কিভাবে বাবাকে সহযোগিতা করা যায় সেই চিন্তা থেকে ফেসবুক পেজ খুলে সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি পিস বাজারে বিক্রি শুরু করেন।কিন্তু তেমন লাভবান হতে পারেননি। তাই অন্যকিছু করার চিন্তা করছিলেন তারা। ছোটকাল থেকেই রান্নায় ঝোঁক ছিল বড় বোন চয়নের। তো সেখান থেকে তার গ্রামে অনলাইন রেস্তোরাঁ চালু করার বুদ্ধি মাথায় আসে।
যেহেতু গ্রামে তেমন কোনো ভালো মানের রেস্তোরাঁ নেই তাই ভালো সারা ফেলতে পারে তাদের অনলাইন রেস্তোরাঁ। এই ভেবে পরিবারের সাহায্য-সহযোগিতায় একটি অনলাইন রেস্তোরাঁ খুলেন এবং নাম দেন তামাই ফুড কার্ট। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে গ্রামে খাবার সরবরাহ শুরু করেন তারা।
জাকিয়া আফরোজের নেতৃত্বে ও দুই বোন জুলিয়া আফরোজ ও নুসরাত জেরিনের সহযোগিতায় খুব দ্রুতই এই রেস্তোরাঁ ব্যবসায় সাফল্য আসে তাদের।স্নাতক প্রথম বর্ষে পরছে জুলিয়া এবং নুসরাত দশম শ্রেণীতে।
চয়ন বলেন “অনলাইন খাবারের এ রেস্তোরাঁ মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন অনেক ভালো অবস্থা। শুধু আমার গ্রাম না দূরদূরান্ত থেকে অর্ডার আসে। মাত্র পাঁচ মাসে টিএফসি-তামাই ফুড কার্ট এখন নিজ গ্রামসহ আসপাশের এলাকার সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।”
ছোটকাল থেকে শখের বশে রান্না করতেন চয়ন।তবে কখনও প্রফেশনালি রান্না শিখেননি। এই শখের রান্নাই আজ তিন বোনকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে।
টিএফসিতে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিরিয়ানি, রাইসবোল, পাস্তা, তেহারি, চিকেনফ্রাই, শর্মা, চাইনিজ খাবারসহ অনেক ধরনের খাবারই তৈরি হয়।এর মাঝে চাহিদার শীর্ষে আছে বার্গার, পিজ্জা ও রাইসবোল। পিজ্জা বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকায়, রাইসবোল ৯৯ টাকায়, বার্গার ৯৯ থেকে ১৫০ টাকায়।প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করেন তারা
চয়নের বাবা মোটরসাইকেলে করে অর্ডার অনুযায়ী যথাসময়ে খাবার পৌঁছে দেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যথাসময়ে মোটরসাইকেলে গিয়ে পৌঁছে দিই। খাবার খেয়ে সবাই প্রশংসা করে। আমার অনেক ভালো লাগে। স্বপ্ন আছে ভালো মানের একটা রেস্তোরাঁ দেব।’
কখনো ভাবতেই পারেননি অনলাইনে একটি রেস্তোরাঁ চালিয়ে কখনো সফল হবেন। এখনো ভাবতে খুব অবাক লাগে তার। চয়ন বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার পর নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছে। আগের জীবনটা ছিল ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে। ভেবে ভালো লাগে, আমাদের কারণে আরও কিছু মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।’
Md.Fardin Rahman Khan
Intern,YSSE