স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১২ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৬
মঙ্গলবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে শহিদ সেনা শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ঢাকা: সেনাবাহিনীকে দেশের শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,“বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের শক্তি। জাতির যেকোনো দুঃসময়ে তারা এগিয়ে আসে।”
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে শহিদ সেনা শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা দেখেছি, ১৯৭১ সালে যখন গোটা জাতি কিংকর্তব্যবিমূঢ়, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করেছে, সেই সময় সেনাবাহিনীর একজন অখ্যাত মেজর জিয়ার রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে গোটা জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আবার ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এই সেনাবাহিনী সেই মেজর জিয়ার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছে। আবার আমরা এই ২৪ সালে দেখেছি গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন। এই দিনটিতে এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে দিতে, যারা লড়াই করে দেশকে রক্ষা করে তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য, জাতির মনোবলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের শত্রুরা পরিকল্পিতভাবে একটি বিদ্রোহ ঘটিয়েছে বিডিআরকে দিয়ে। বিডিআর এমন একটা সংগঠন ছিল, যেটা ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, সাহসের সঙ্গে তারা তাদের ভূমিকা পালন করেছে।’’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এই বাংলাদেশে তারা সেই ভূমিকা পালন করেছে, যাতে তারা তাদের সীমান্ত রক্ষা করতে পারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পরপরই অত্যন্ত পরিকল্পনার সঙ্গে যারা বাংলাদেশের শত্রু তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে এই ঘটনা ঘটিয়ে সেদিন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রায় ৫৭ জন চৌকস কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছে। মেজর জেনারেল থেকে শুরু করে লেফটেন্যান্ট পর্যন্ত তাদের পরিবার পরিজন কাউকে তারা বাদ রাখেনি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এই যে একটা ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, আমার প্রশ্নটা ওই জায়গায়- সেদিন যিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা, তিনি সেদিন কী ভূমিকা পালন করেছেন? আমার প্রশ্ন সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে, যিনি ওথবাউন্ড ছিলেন যে, তিনি তার সহকর্মীদের রক্ষা করবেন, সেই তিনি সেদিন কী ভূমিকা পালন করেছিলেন? আমরা অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করলাম যে নাটক চলছে। ওই সুগন্ধ্যায় বসে আর শেরাটন থেকে ভালো ভালো খাবার নিয়ে যারা সেনা অফিসারদের হত্যা করল, তাদেরকে বসিয়ে খাওয়া-দাওয়া করানো হল।’’
‘‘আমরা কী বলব, কী বুঝবে মানুষ? আজকে এই যে, ঘৃণা তাদের (আওয়ামী লীগ) প্রতি, এটা এক দিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘকাল ধরে মূলত, ১৯৭২ সাল থেকে এই দলটির প্রতি ঘৃণা জন্ম হয়েছে। কারণ, তারা কোনো দিনই বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসেনি, তারা ভালোবেসেছে তাদের পদ, তাদের ক্ষমতা, তাদের পরিবারকে’’- বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে বাংলাদেশের যে পরিবর্তন হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নতুন একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলবার, বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার এবং সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবার, সেই সুযোগকে ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে শেখ হাসিনা চক্রান্ত করছেন, ষড়যন্ত্র করছেন, কীভাবে গণঅভ্যুত্থানের ফলাফলকে নস্যাৎ করে দেওয়া যায়, বাংলাদেশে কী করে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়, একটা অস্থিতিশীল পরিস্তিতি সৃষ্টি করা যায়। তারই অংশ হিসেবে আজ বিভিন্ন পক্ষ থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’’
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, “বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তী সরকার এবং ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আসা একটি সরকার। আমাদের প্রত্যেকের একটা আশা আছে, প্রত্যাশা আছে যে, এই সরকার জনগণের সেই আশা পূরণ করবে। দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না করলে কোনো পথেই আমরা স্থিতিশীল অবস্থা পাব না “
এমতাবস্থায় দেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করব, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, সেটা শেষ করে দেশকে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা, শান্তি, এবং ভবিষ্যতের জন্য সমৃদ্ধি আনবেন- আপনার কাছে আমরা এটাই প্রত্যাশা করি।”
সারাবাংলা/এজেড/আরএস
বিডিআর বিদ্রোহ
মির্জা ফখরুল
শেখ হাসিনা
সেনাবাহিনী