স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: হামলা-গ্রেফতার করে আন্দোলন দমানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল পল্লবী জোনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশের জন্য যখন মঞ্চ তৈরি করছিলেন এবং মাইক লাগাচ্ছিলেন ঠিক তখনই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠি-শোঠা নিয়ে মারাত্মক অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে আক্রমণ করে। এই আক্রমণের আমাদের প্রায় ৭৫ জন আহত হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে ৮ জন। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এভাবে সন্ত্রাসী হামলা করে, আহত করে, জখম করে, হত্যা করে, গ্রেফতার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না, বিএনপিকে রাজপথ থেকে সরানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘পল্লবী জোনে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিলো ডি ব্লকের ঈদগাহ মাঠে। পুলিশ আপত্তি করার পরে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ মুকুল ফৌজ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। যখন আমাদের কর্মী ভাইয়েরা মঞ্চ তৈরি করছিলেন ঠিক তখনই এই হামলা চালানো হয়। সবচাইতে দুঃখজনক ও ভয়াবহ কাণ্ড হচ্ছে গতকাল আক্রমণকারীদেরকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের নেতা-কর্মীরা যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখন আমাদের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস এবং শেষে বন্দুক দিয়ে গুলিবর্ষণ করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বার বার বলে আসছি যে, পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত রক্ষা করা, পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত নিরপেক্ষ থাকা। কিন্তু পুলিশ পুরোপুরিভাবে হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনকে নস্যাতের জন্য কাজ করছে। আমরা মনে করি, পুরোপুরিভাবে উসকানি দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করা, বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচনি মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তারা এই কাজগুলো করছে।’
কর্মসূচি : গতকাল ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরসহ সকল মহানগর, জেলা-উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। রাজধানীতে সেদিন মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে বিকাল তিনটায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিদিন আওয়ামী লীগের নেতারা এটা বলতে চান যে, বিএনপি এই সন্ত্রাসী হামলা করছে। আপনারাই দেখেছেন-পুরো সন্ত্রাসটা করছে তারা এবং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, দেশে যেন গণতন্ত্র না থাকে, দেশে যেন সেরকম কোনো পরিবেশ না থাকে, যে পরিবেশে সত্যিকার অর্থেই একটা নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী শক্তি, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের যে অধিকার সেই অধিকারকে হরণকারী শক্তি। আওয়ামী লীগ অতীতেও একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, এখনো তারা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী গতকাল আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ওপরে আক্রমণ করেছে। এই সব আক্রমণ করে কোনো লাভ হবে না। ঢাকায় আমাদের যে কর্মসূচি ২৮ তারিখ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সেই কর্মসূচি চলবে। প্রতিকূলতার মধ্যেও এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
যুবলীগের তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী, রুপনগর থানা আওয়ামী লীগের রজ্জব আলী, কাশেম মোল্লা, তুহিন, শেখ মান্নান, মো. লিটু, সালাহউদ্দিন রবিন, ইসহাক মিয়া, মোবাশ্বের চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন টেংগু, জাকির হোসেন, মো. খোকন, মো. ইব্রাহিম, খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আমান উল্লাহ আমান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি এই হামলার নিন্দা জানাই। সরকারকে বলছি, এই হামলার ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আমাদের একটাই কথা, মাঠে আমরা এখনো নামি নাই, নামছি। মাঠে মৃত্যু হলেও আমাদেরকে উঠাতে পারবে না। সরকারকে চিন্তা করতে হবে তারা লাশ চায় না অন্য কিছু চায়।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/ এনইউ