অনাহারে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা, সরকারের কাছে প্রবাসী অধিকার পরিষদের তিন দাবী
সাইদুল ইসলাম, লন্ডন থেকে: বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকে এই পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কার্যত লকডাউন চলছে। কখনও শিথিল কখনও কঠোর এভাবে টানা এক বছরের লকডাউনে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা চরম অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন। এর মধ্যে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। করোনা ও লকডাউনের কারণে কাজ না থাকায় অনেক প্রবাসীদের জীবনধারণের জন্য খাবারের অর্থটুকুও অবশিষ্ট নাই। লকডাউনের পাশাপাশি বছর ব্যাপি চলছে অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার। একদিকে কর্মহীন অন্যদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীরা এক দূর্বীসহ জীবন অতিবাহিত করছে।
কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের দেশে ফেরার পথ অনেক সহজ করে দিয়েছে মালয়েশিয়ান সরকার। কোন প্রকার ইমিগ্রেশন ঝামেলা ছাড়া শুধুমাত্র এয়ারপোর্টে মালয়েশিয়ান ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে দেশে যেতে পারবেন কাগজপত্র বিহীন যেকোনো প্রবাসী। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত হোটেলে উচ্চ মূল্যে কোয়ারেন্টাইনের শর্ত জুড়ে দেওয়াতে কর্মহীন প্রবাসীরা দেশে ফিরতে পারছে না। এ ছাড়া পাসপোর্ট নবায়নে গাফেলতির কারনে ও দালালদের দৌরাত্ম্যে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পাসপোর্ট পাচ্ছে না মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা। কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই প্রবাসী ভাইয়েরা সর্বক্ষণ গ্রেপ্তার আতংকে সময় পার করছে।
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মালেশিয়া প্রবাসী আল মামুন আমাদের সময় ডটকমের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধির সাথে ফোনালাপে বলেন, “করোনা ও লকডাউনের কারনে অনেক বাংলাদেশীরা খাদ্য সংকটে পড়েছেন। গত সপ্তাহে আমার দোকানে এসে ৩/৪ জন তাদের মোবাইলের বিনিময়ে খাবার কেনার টাকা চেয়েছেন। আমি তাদের মোবাইল না রেখেই এক বেলার খাবারের ব্যাবস্থা করে দিয়েছি। আমি আপনার মাধ্যমে সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, জরুরী ভিত্তিতে যেন মালেশিয়ায় খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়।
এদিকে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশীদের অধিকার ভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় সংকটাপন্ন প্রবাসীদের সংকট নিরসনে সরকারের নিকট তিন দফা দাবী পেশ করেছে। গতকাল অধিকার পরিষদের সভাপতি জার্মান প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার কবীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী সলিসিটর বিপ্লব কুমার পোদ্দার সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিন দফা দাবী উত্থাপন করা হয়। দাবীগুলো হলো, ১) লকডাউনে দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন থাকা মালয়েশিয়া প্রবাসীদের জন্য দ্রুত খাদ্য সহযোগিতা পাঠানো, ২)হোটেল কোয়ারেন্টাইন বাতিল করে সরকারি খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বা নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম করা ও ৩) দালালদের দৌরাত্ম বন্ধ করে মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট দ্রুত নবায়নের ব্যবস্থা করা।
এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী আজাদ আহমেদ পাটোয়ারী এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকার পাকিস্তান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুটনৈতিক স্বার্থে হাজার হাজার কেজি আম পাঠাচ্ছে। অন্যদিকে মালেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসীরা অনাহারে অর্ধাহারে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিনাতিপাত করলেও সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। অতিসত্বর সরকার মালেশিয়া প্রবাসীদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে যেন রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করে।