
জুলফিকার জুয়েল, স্টাফ রিপোর্টার (রংপুর)::
আশার বাণী নয়, দীর্ঘ প্রতিক্ষারপর রংপুরে শুরু হচ্ছে হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ। অবশেষে রংপুরে হাই-টেক পার্ক এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। রংপুর মহানগরীর খলিশাকুড়িতে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই-টেক পার্ক- নামে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত একারণে যে আজ রংপুরে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই-টেক পার্ক এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে। আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে রংপুরবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নাই। আর এজন্যই আমরা একটি প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, রংপুর সবসময়ই অবহেলিত এলাকা ছিলো, এখানে কখনো শিল্পায়ন হয়নি। রংপুরবাসীর উন্নয়নে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই-টেক পার্কের মাধ্যমে এখানকার তরুণ-তরুণীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হলো। এই পার্কে তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় অনেকেই বিদ্রুপ করেছে। অথচ এখন এই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে নীরবে-নিভৃতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গিয়েছেন। শিক্ষা জীবনে তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন ষাট এর দশকে। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৬২ সালে তিনি আটক হন, কিছু দিন জেলও খাটেন। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর গবেষণা কর্মের পরিধি ছিল ব্যাপক। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া শুধু তার কাজের জন্য নয়, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। এ কারণে আমরা এই হাই-টেক পার্কের নামকরণ রংপুরের এই কৃতি সন্তানের নামে করতে চাই। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাই- টেক পার্ক, রংপুরের কাজ শুরু হলো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি বলেছেন,রংপুরে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমিতে শুরু হচ্ছে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাইটেক পার্ক।এটি রংপুর বাসী ও তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া একটি অন্যতম উপহার। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে রংপুর হাইটেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন,আমরা শ্রম নির্ভর অর্থনীতি থেকে মেধা নির্ভর অর্থনীতির দিকে যাওয়ার জন্যই এই হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই হাইটেক পার্ক হবে সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের চালিকা শক্তি। যা হবে রংপুর বিভাগের লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থানের ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এরই মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সার্বিক নির্দেশনায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ১৯০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ১২৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদার দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্যমে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে ৩৬০০০ জন। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইসিটি খাতে প্রায় ২২০০০ জনের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।প্রকল্পের বিষয়ে আরো জানা যায়, ইতোমধ্যেই কিছু জনোবল নিয়োগ হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই এখন অবস্থান করছেন এই এলাকায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১০.৬৮ একর জমিতে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর মহানগরীর খলিশাকুড়িতে এই হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হলে এখানে প্রায় ৩০০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্ষ্ঠুানে আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালের জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। বিষয়টি নিয়ে নানন রকম প্রতিক্রিয়া ছিল রংপুরবাসীর। দীর্ঘ ৪ বছর অপেক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবশেষে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিশাকুড়ি এলাকায় বহুল প্রতীক্ষিত হাইটেক পার্কের কাজ শুরু হলো।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বহুল আকাংখিত এই হাইটেক পার্ক নির্মিত হলে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সরকারের এই প্রকল্প ঘিরে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে জেলার হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিদর্শনের সময় আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশের প্রতিটি বিভাগে এবং পরবর্তীতে প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করার নির্দেশনা দেন।
এরপরই জেলা পর্যায়ে হাই-টেক পার্ক স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল সারাদেশের জেলা পর্যায়ে ১২টি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৮শ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে রংপুর হাইটেক পার্কের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ১৫৪ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা ধরা হয়। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।