নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ সময়ে দুই সন্তানের সকল খরচ পিতাকে বহন করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিজের জিম্মায় নিতে জাপানি মা নাকানো এরিকোর দায়ের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে রায়ের জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়।
ওই দিন আদালতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সব কিছু আইনের ব্যাখ্যা বা আইন দিয়ে রেগুলেটেড হয় না। আমরা আপনাদের অনুরোধ করব, প্রথম থেকেই বলছি যেহেতু দুজন (বাবা-মা) এখনও পৃথক হননি, বাচ্চাদের ভবিষ্যতের দিকে খেয়াল করে নিজেরা মীমাংসা করে ফেলতে পারেন কি না। যেহেতু এখনও পৃথক হননি, তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিদ্যমান আছে, ১৩ তারিখের মধ্যে যদি মীমাংসা করতে পারেন, তাহলে ভালো। না হলে আমরা যতটুকু শুনলাম, আইন যতটুকু আছে, সে অনুসারে আদেশ দিয়ে দেব।
ওই দিন আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান রয়েছে। তারা টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিলেন।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। পরে ইমরান দুই কন্যাকে নিয়ে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
এরপর এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। এসবের মধ্যেই গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এদিকে গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। পরে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।
আরও পড়ুন:
বরিশালে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ