যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের উদ্দেশে রওনা হওয়া আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ গাজায় ভিড়তে দেয়নি ইসরায়েল। ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করা জাহাজটি গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জোরপূর্বক ইসরায়েলের আশদাদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন ওই জাহাজে থাকা সুইডেনের পরিবেশবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
তিনি ভিডিওতে বলেন, ‘আমার নাম গ্রেটা থুনবার্গ, আমি সুইডেন থেকে এসেছি। আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের আটকে রাখা হয়েছে। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী কিংবা ইসরায়েলকে সমর্থন জোগানো বাহিনী আমাদের অপহরণ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার সব বন্ধু, পরিবার ও সহকর্মীদের অনুরোধ করছি, তারা যেন আমাকে এবং অন্যদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য সুইডিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।’
জাহাজটি ইসরায়েলি বাহিনী দখলে নেওয়ার প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে ওই ভিডিও বার্তা দেন গ্রেটা থুনবার্গ। যদিও সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় ভিডিওটি আগে থেকেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল।
ম্যাডলিন জাহাজে গ্রেটা থুনবার্গসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১২ জন মানবাধিকারকর্মী আছেন। গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়াও ফরাসি চিকিৎসক ও কর্মী বাপতিস্ত আন্দ্রে, আল জাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ, ব্রাজিলিয়ান কর্মী ও ফ্রিডম ফ্লোটিলা ব্রাজিলের সমন্বয়ক থিয়াগো অ্যাভিলা, ফরাসি-ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গ্রিন পার্টির সদস্য রিমা হাসান, তুর্কি মানবাধিকারকর্মী সুয়াইব ওর্দু। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের আরও কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং সমুদ্র সংরক্ষণকর্মীও রয়েছেন এতে।
ম্যাডলিন জাহাজে আছেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান, জার্মানির ইয়াসেমিন আচার, ফ্রান্সের ব্যাপতিস্ত আন্দ্রে, ব্রাজিলের থিয়াগো আভিলা, ফ্রান্সের ওমর ফায়াদ, পাস্কাল মৌরিয়েরাস, ইয়ানিস মোহামদি, তুরস্কের সুলাইব ওর্দু, স্পেনের সার্জিও তোরিবিও, নেদারল্যান্ডসের মার্কো ফন রেনেস ও ফ্রান্সের রিভা ভিয়া।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ম্যাডলিন জাহাজটি আটক করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সেলফি ইয়ট’ এবং তথাকথিত ‘সেলিব্রিটিদের’ নিরাপদে ইসরায়েলের উপকূলের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে লিখেছে, তাদের জাহাজ থেকে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া টেলিগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে ত্রাণ দিতে যাওয়া মানবাধিকারকর্মীদের হাত ওপরের দিকে তুলে বসে থাকতে দেখা গেছে।
সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গাজার মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে যেসব সহায়তা দরকার, সেগুলো বহন করছে জাহাজটি। এর মধ্যে আছে চিকিৎসার সরঞ্জাম, ময়দা, চাল, শিশুদের দুধ (বেবি ফর্মুলা), ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, ক্রাচ ও শিশুদের কৃত্রিম অঙ্গ।