#নয়াদিল্লি: মারণ ভাইরাস করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত গোটা দেশ। এর মধ্যেই দিন দিন আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে করোনা ভ্যাকসিনের আকাল। রাজ্যগুলিতে যে পরিমান ভ্যাকসিন মজুত রাখা হয়েছিল তা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে। কেন্দ্র থেকে নতুন করে ভ্যাকসিন না আসায় ঝাঁপ ফেলতে হচ্ছে টিকাকরণ কেন্দ্রে। তারই মধ্যে ১ মে থেকে কেন্দ্রের করা ঘোষণা অনুসারে ১৮ বছরের উর্ধে সকলকে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু টিকার অপ্রতুল যোগানের কারণে তাও ঠিক ভাবে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ৪৫ বছরের উর্ধ্বে কেউ কেউ প্রথম ডোজ পেলেও পাচ্ছেন না দ্বিতীয় ডোজ। আবার অনেকের কপালে জোটেনি একটা ডোজও। অনেকের ধারণা ভ্যাকসিন বিদেশে পাঠানোর কারণের দেশে বাড়ছে এর ঘাটতি।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, ২০২১ সালের অগস্টের মধ্যে ভ্যাকসিনের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলির প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন এবং বেশ কয়েকটি নতুন ভ্যাকসিন ভারতে আসার ফলে। ২০২১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডোজ সরবরাহের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নির্মাতারা দ্রুত গতিতে কাজ চালাচ্ছে এবং ট্রায়ালে সফলতার পর নিয়ামকের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পাচ্ছে। তবে ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ভালো দিনটির বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে।
এখন যে প্রশ্নটি সকলের মনে আসতে পারে তা হল, “অগস্টের মাঝামাঝি নাগাদ আমরা কী করব যখন ভ্যাকসিনগুলি বহুল পরিমাণ এবং গতির সঙ্গে সরবরাহ করা হবে?” এই প্রশ্নটি মূলত এই রোগ থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সম্পর্কিত উদ্বেগ এবং লার্জ স্কেল টিকা ছাড়াই অর্থনৈতিক কার্যক্রম যে পরিমাণে আবার শুরু হতে পারে তা নিয়ে হওয়া জল্পনা, এই উভয়ের সঙ্গেই জড়িত। স্কুল খোলার জন্য হোক, বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হোক বা নির্বিঘ্নে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করা হোক সব ক্ষেত্রেই এক অনিশ্চয়তা থেকে যাবে।
এই সহজ পদক্ষেপগুলি আমরা অনুসরণ করতে পারি:
উত্তরটি বেশ পরিষ্কার এবং সহজ। জনস্বাস্থ্যের সতর্কতা (Public Health Precautions) অনুসারে ভ্যাকসিন পাওয়া যাক বা না যাক, এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণ এড়িয়ে চলার বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান। মাস্ক পরা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা আমাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার মন্ত্র যা আরও কয়েক মাস আমাদের পালন করতে হবে। বাড়িঘর, অফিস, কারখানা, দোকান, স্কুল ও কলেজগুলিতে বায়ুপ্রবাহের জন্য আরও ভালো বায়ুচলাচল মাধ্যমের ব্যবস্থা করতে হবে। অ্যারোসোলগুলির মাধ্যমে ভাইরাল ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। বদ্ধ স্থানে যারা কাজ করছেন বা মিটিং করছেন, তাঁদের দু’টো করে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
সুপার স্প্রেডার নানান অনুষ্ঠান যেমন রাজনৈতিক র্যালি, বিয়েবাড়ির মতো বড়ো অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা উচিত। বাড়িতে বসেই উৎসব ও অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন।
এবিষয়টি আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে প্রতিশ্রুতি অনুসারে, ২০২১ সালের অগস্টে ভ্যাকসিনের ব্যপক সরাবরাহের ফলে এবং তা গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক সুরক্ষা পাওয়া যাবেনা। স্বতন্ত্র স্তরে, ভ্যাকসিনটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে কয়েক সপ্তাহ সময় নেবে। সম্প্রদায় স্তরে ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব দেখা যাওয়ার আগে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে টিকা দিতে হবে।
ভ্যাকসিন প্রদানের কৌশল:
টিকা দেওয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল একজন ব্যক্তিকে এই মারণ রোগ এবং মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা। সুতরাং, গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আগে টিকারণের প্রয়োজন। ৪৫ বছরের উর্ধ্বে এবং করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন কম বয়সীদের আগে টিকা দিতে হবে। ভ্যাসিনের জোগান যখন বেশি হবে তখন আমাদের কম বয়সীদের টিকারণের প্রসঙ্গে ভাবতে হবে। ২০২১ সালের শেষের দিকে, আমরা ছোট বাচ্চাদের ওপর সম্প্রতি শুরু করা ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলাফলগুলিও পেতে পারি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (World Trade Organisation) ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তাবিত পেটেন্ট মকুব পেলে আমাদের ভ্যাকসিন সরবরাহের অবস্থারও কয়েক মাস পরে উন্নতি হতে পারে। বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশ এই প্রস্তাব সমর্থনও করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও এখন এর সমর্থন করেছে।
তবে বর্তমানে আমাদের উচিত শুধুমাত্র ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি গুলি অনুসরণ করা। আমরা সকলেই যদি করোনা সংক্রমণ এড়ানোর দিকে নজর দিই, তবে নিশ্চয়ই এই ভাইরাসের থেকে আমরা মুক্ত থাকব!