শাহেদ মাহমুদ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট
শেকৃবি: নাম নাগলিঙ্গম। প্রকাণ্ড বৃক্ষ, লম্বা পাতা, সূঁচালো ডগা আর ধূসর কাণ্ড। সব মিলিয়ে এক অদ্ভূত সুন্দর ফুল। ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো।
বিরল প্রজাতির এ গাছ সারাদেশে আছে মাত্র ৫০টি। এরমধ্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি গাছ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাগারের সামনে এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে নাগলিঙ্গম গাছগুলো বাহাড়ি রঙের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ছুটির দিনে ঘুরতে আসা অনেক দর্শনার্থী একপলক এ গাছ দেখতে ভোলেন না।
জনশ্রুতি আছে, নাগলিঙ্গম গাছের ফুল ও ফল একান্তই নাগ-নাগিনীর সম্পদ। যদিও বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না! ফল হুবহু কামানের গোলার মতো হওয়ায় এ গাছ ইংরেজদের কাছে ক্যানন বল নামে পরিচিত। নাগলিঙ্গম ফল হাতির প্রিয় খাবার, এজন্য কোথাও এ উদ্ভিদটি হাতিফল নামেও পরিচিত।
এই বৃক্ষের আদিনিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়। হিন্দু ও বৌদ্ধ উপাসনালয়গুলোতে পবিত্র বৃক্ষ মনে করে রোপণ করা হয় নাগলিঙ্গম।
ফ্রান্সের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জে এফ আবলেট ১৭৫৫ সালে নাগলিঙ্গম গাছের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেন Couroupita guianensis সাধারণত চিরসবুজ এ বৃক্ষটি ৭০ থেকে ৯০ ফুট উঁচু হতে দেখা যায়। গাছের গোড়ার ব্যাস প্রায় ৬ ফুট এবং কাণ্ড ৩০ ফুট লম্বা। গাছের গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণত ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪-৫ ইঞ্চি চওড়া হয়।
এক একটি মঞ্জরিতে ১০ থেকে ২০টি ফুল ক্রমান্বয়ে ফুটতে থাকে। মঞ্জরির একদিকে নতুন ফুল ফোটে অন্যদিকে পুরাতন ফুল ঝরে পড়ে। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং কয়েকদিনের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজায়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিদ্যার সহকারী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘নাগলিঙ্গম ফুলের গন্ধ একান্তই তার নিজের মতো। যার মাদকতা সবাইকে বিমোহিত করে তোলে। নাগলিঙ্গম সুগন্ধি শিল্পে ব্যবহারযোগ্য। ফুলে কোনো নেকটার নেই। শুধুমাত্র গন্ধে পোকারা আকৃষ্ট হয়ে পরাগায়ণে সহয়তা করে। মূলত মৌমাছি পরাগায়ণে বাহক হিসেবে কাজ করে। নাগলিঙ্গম গাছের ফুল, ফল ও বাকলের নির্যাস ওষুধ হিসেবে বহুল প্রচলিত। রূপে গুণে ভরপুর এই উদ্ভিদের সংখ্যা এখন পৃথিবীতে খুব বেশি নয়। দেশেও এর সংখ্যা খুবই কম।’
সারাবাংলা/এমও