আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিরোধপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখে সামরিক অভিযান চালিয়েছে আজারবাইজান। নতুন শুরু হওয়া এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে আর্মেনিয়া। এই অঞ্চলের বেসামরিক জনসংখ্যাকে রক্ষা করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রদূত এডমন মারুকিয়ান বলেন, আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখের শান্তিপূর্ণ জনগণের বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের আগ্রাসন এবং সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের পালা, আটকে পড়া এবং ক্ষুধার্ত মানুষের উপর আগ্রাসন এবং সামরিক আক্রমণ বন্ধ করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
আর্মেনিয়ার এই কূটনীতিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এবং ইইউ নেতাদের কাছে বাকুর নিন্দা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন আজারবাইজানকে অবিলম্বে সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক অবশ্য বাকুর পদক্ষেপের পক্ষে বলেছে, আজারবাইজানের সরকার তার সার্বভৌম ভূখণ্ডে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
নাগোর্নো-কারাবাখের আজারবাইজানের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জাতিগত আর্মেনীয় ছিটমহলকে ঘিরে কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত ডিসেম্বর থেকে আর্মেনিয়া থেকে ছিটমহলে প্রবেশের একমাত্র রুট লাচিন করিডোর অবরোধ করে রেখেছে আজারবাইজান। এই করিডোরে আজারবাইজানের সেনা স্থাপনা লক্ষ্য করে মঙ্গলবার গুলি ছুঁড়ে আর্মেনিয়ার সেনারা। এর প্রতিক্রিয়ায় অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে বাকু।
মঙ্গলবার বিবিসির খবরে বলা হয়, একটি মাইন বিস্ফোরণ এবং অন্য একটি ঘটনায় ১১ আজারবাইজানীয় পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর আর্মেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে বাকু।
আর্মেনিয়ান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন-এর খবরে বলা হয়েছে, বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজানের সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছেন।
এদিকে, নাগোর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলছেন, মঙ্গলবার আজারবাইজান সামরিক অভিযান শুরু করার পর পার্বত্য অঞ্চলের ১৬টি গ্রামের সাত হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। ইতোমধ্যে দুইবার পূর্ণ পরিসরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে দেশ দুটি। ১৯৯০ দশকের গোঁড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর যুদ্ধ জড়ায় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। সর্বশেষ ২০২০ সালেও দুই দেশ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
২০২০ সালে রাশিয়ার হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতির পর নাগোর্নো-কারাবাখে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে রাশিয়া। তবে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া আজারবাইজানের অভিযান মোকাবিলায় মস্কোর সেনাদের নিষ্ক্রিয়তার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আজারবাইজানের ক্রমাগত আগ্রাসনের মুখে দীর্ঘমেয়াদী মিত্র আর্মেনিয়াকে রক্ষা করতে হস্তক্ষেপে অক্ষম বা অনিচ্ছুক বলে অভিযোগ উঠেছে মস্কোর বিরুদ্ধে।
কারাবাখ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই অঞ্চলে অব্যাহত গোলাগুলির মধ্যে আজারবাইজানের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা করছে।
কারাবাখের নেতাদের আলোচনার আহ্বানের জবাবে আজারবাইজানের সরকার বলেছে, তারা আর্মেনীয়দের সঙ্গে আলোচনায় ইচ্ছুক। কিন্তু বাকুর এক বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ বন্ধ করতে অবৈধ আর্মেনিয়ান সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে, সমস্ত অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং অবৈধ শাসন ভেঙে দিতে হবে। অন্যথায় সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
এদিকে নাগোর্নো-কারাবাখে আর্মেনীয় সেনা থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাগোর্নো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার সহায়তা মানবিক প্রকৃতির। মূলত লাচিন করিডোরে আজারবাইজানের অবরোধের কারণে সৃষ্ট মানবিক অপরাধ এই মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।
এদিকে, আর্মেনীয় অধ্যুষিত কারাবাখে আজারবাইজানের আগ্রাসন মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে রাজধানী ইয়েরেভানে।
ইয়েরেভানের রিপাবলিক স্কোয়ারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে শত শত লোক জড়ো হয়েছে মঙ্গলবার। ঘটনাস্থলে থেকে বার্তাসংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা ‘নিকোল বিশ্বাসঘাতক’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
সারাবাংলা/আইই