আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উত্তর এলাকায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভাড়াটে বিদ্রোহী দল ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন নিহত হয়েছেন বলে জানাচ্ছে দেশটির প্রতিরক্ষা দফতর। রাশিয়ান গণমাধ্যমগুলোও দেশটির সরকারি দফতরগুলোর বরাত দিয়ে প্রিগোজিন মারা গেছেন বলে খবর দিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ক্রেমলিন থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। ওই বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও এ বিষয়ে টুঁ শব্দ করেননি।
ওয়াগনার বাহিনীর দাবি, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দফতরই বিমানটিকে ভূপাতিত করেছে। তবে তারা কিংবা স্বতন্ত্রভাবে কোনো গণমাধ্যমই প্রিগোজিনের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে রাশিয়ান একটি টিভি চ্যানেলের দাবি, প্রিগোজিনের মরদেহ ‘প্রাথমিকভাবে’ শনাক্ত করা গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ডিপিএ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের বিরোধিতাকারীদের এমন ‘রহস্যময়’ পরিণতি বরণ নতুন কিছু নয়। প্রিগোজিনের এই মৃত্যুসংবাদকে তারা পুতিনের পক্ষ থেকে পুতিনবিরোধীদের জন্য ‘শীতল বার্তা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ভ্লাদিমির পুতিনের ‘পারসোনাল শেফ’ হিসেবে উত্থান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের। তবে গত জুনে তার নেতৃত্বাধীন ওয়াগনার বাহিনী রুশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। পরে ওয়াগনার গ্রুপ বেলারুশ চলে যাবে- এমন শর্তে সমঝোতা হয়। ওয়াগনার গ্রুপের এই বিদ্রোহকে প্রকারান্তরে ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই দেখা হয়েছে।
রাজনৈতিক ঝুঁকি বিষয়ক উপদেষ্টা গ্রুপ ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান ব্রেমার বিবিসিকে বলেন, বিদ্রোহের অবসানের জন্য প্রিগোজিন ও ক্রেমলিনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল। তবে ওই সমঝোতার সময়েই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে প্রিগোজিন খুব বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারবেন না।
প্রিগোজিনের মৃত্যুসংবাদ যদি সত্যি হয়, ব্রেমার বলছেন, সে সংবাদ এটিই প্রমাণ করবে যে পুতিন কতটা ‘চূড়ান্ত হিসেবি’। তিনি অপেক্ষা করেছেন ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি প্রিগোজিনকে অনেক বেশি দুর্বল অবস্থায় পাচ্ছেন।
পুতিনের সতর্কবার্তার কথা উল্লেখ করে ব্রেমার বলেন, ‘প্রিগোজিনকে দুই মাস মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ দিয়েছেন পুতিন। রাশিয়ায় যারা পুতিনবিরোধী আছেন বা পুতিনের বিরুদ্ধে যেতে চান, আমার মনে হয় এটি তাদের জন্য হিমশীতল বার্তা।’
ব্রেমারের এমন বিশ্লেষণ অমূলক মনে করার কারণ নেই বলে মনে করছেন অন্য বিশ্লেষকরাও। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে পুতিনবিরোধী এমন কয়েকজনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি, সাবেক রাশিয়ান ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপাল, রাশিয়ান খ্যাতনামা অধিকারকর্মী ভ্লাদিমির কারা-মুরজা, সাবেক কেজিবি এজেন্য আলেক্সান্ডার লিটভিনেকো, ইউক্রেনের বিরোধীদলীয় নেতা ভিক্টর শেভচেংকোসহ আরও বেশকিছু ব্যক্তির উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে, যারা প্রত্যেকেই পুতিনের কঠোর সমালোচক ছিলেন। বিষপ্রয়োগসহ নানা ‘রহস্যময়’ভাবে তারা প্রাণ হারিয়েছেন। প্রিগোজিনকেও একই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকসহ পশ্চিমাবিশ্বের নেতারা।
সারাবাংলা/টিআর